ছয় ডিসেম্বর থেকে দশ ডিসেম্বর। ঢাকার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের(বিপিএল) তৃতীয় পর্ব। পাঁচদিনে সর্বমোট দশ ম্যাচে যেমন ছিলো ব্যাটে বলের লড়াই, তেমনি ঘটন-অঘটনে আগের দুই পর্বের মতো এই পর্বেও কম যায়নি। তৃতীয় পর্বের খেলাতে তেমনি আলোচিত-সমালোচিত উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা নিয়ে আজকের আয়োজন। জানাচ্ছেন- সৌরভ মাহমুদ।
অধিনায়কই বদলে গেলো সিলেটের!
টস করতে যখন তিনি নামলেন তখনই একটা খটকা লাগলো। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বরিশাল বুলসের অধিনায়ক হিসেবে দেখা গেল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকেই। কিন্তু, সিলেট সুপার স্টার্সের অধিনায়কের পদে আসলো পরিবর্তন। মুশফিকুর রহিমের জায়গায় সেখানে দেখা গেল পাকিস্তানি টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদিকে।
গেইল ঝড়!
সেঞ্চুরি করার ঘোষণা দিয়ে বরিশাল বুলসের হয়ে খেলতে আসেন বিপিএলের তৃতীয় আসরে। কিন্তু প্রথম দুই ম্যাচে আট রানেই খুশি থাকতে হয়েছে তাকে। তবে এবারের আসরে নিজের তৃতীয় ম্যাচে চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে ফিরলেন তিনি। খেলেন ৯২ রানের অপরাজিত এক ইনিংস।
ওপেনিংয়ে নেমে ৩৪ বলে ৪৯ রান করার পর তাসকিন আহমেদের একটি বলে চার মেরে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন তিনি। জয় নিয়েই মাঠ ছাড়েন। এরপর আরো ১২টি বল খেলেছেন, যোগ করেছেন ৩৯ রান। এই ইনিংস খেলার পথে সবমিলিয়ে ছয়টি চার ও নয়টি ছয় মারেন গেইল। তার ব্যাটে ভর করেই আট উইকেটের বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বরিশাল বুলস।
হাফিজের সুর বদল, সেই আমিরেই কুপোকাত!
শুরুতে কথা ছিলো বিপিএলের এই আসরে চিটাগং ভাইকিংসের হয়ে খেলবেন হাফিজ। কিন্তু একই দলে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরা স্বদেশী ক্রিকেটার মোহাম্মদ আমিরও খেলছেন। তাই সরাসরি জানিয়ে দিলেন, আমির খেললে খেলবেন না তিনি।
পরবর্তীতে সুর পালটে বিপিএলে আসলেন হাফিজ। তবে ভাইকিংসে নয়; ঢাকা ডাইনামাইটসের হয়ে খেললেন তিনি। টুর্নামেন্টের তৃতীয় পর্বে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামলেন। কে জানতো, যাকে ঘৃণা করে প্রথমে খেলতে আসেননি, সেই আমিরের বলেই সাজঘরে ফিরতে হবে তাকে!
ইনিংসের চতুর্থ ওভারে আমিরের মোকাবেল করেন হাফিজ। ওভারের প্রথম তিন বলের দুই বল ব্যাটেই লাগাতে পারেননি তিনি। আর চতুর্থ বলে ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে যায় উইকেটরক্ষক এনামুল হক বিজয়ের বিশ্বস্ত গ্লাভসে। ফলাফল মাত্র এক রানেই ফিরে যান তিনি।
নতুন ভূমিকায় ইয়াসির শাহ!
এমনিতে ইয়াসির শাহ্ পাকিস্তান জাতীয় দলের হয়ে নয় বা দশ নম্বর পজিশনে ব্যাট করেন। বোলারদের জন্য সেটাই স্বাভাবিক। চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে বনে গেলেন ব্যাটসম্যান। শুধু ব্যাটসম্যানই না, পুরোদস্তুর ওপেনিং ব্যাটসম্যান!
তবে নতুন এই ভূমিকায় খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি ইয়াসির। আসিফ হাসানের বলে আউট হবার আগে মাত্র দশ রান করেন তিনি।
বোলার নন, অধিনায়ক মাশরাফি!
পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে ইনজুরির সাথেই মূলত লড়াই করতে হয়েছে তাকে। কিন্তু এরমাঝেও আছে ছোটখাট ইনজুরি। যদিও এতে থেমে থাকেননি বাংলাদেশের ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক। জাতীয় দলের মতো বিপিএলের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অধিনায়কত্বও তার কাঁধে। কিন্তু এখানেও ইনজুরি হানা দিয়েছে। হ্যামস্ট্রিংয়ের ইনজুরির কারণে ম্যাচে বল না করলেও মাঠ সামলানোর দায়িত্ব মাশরাফিই পালন করেছেন। বলেছিলেন, দলের প্রয়োজনে চোট নিয়েও খেলতে ভয় নেই তার।
দলে তার জায়গা বোলার হিসেবেই। কিন্তু সেটাই করা হচ্ছে না। শুধু কি অধিনায়কত্ব করতেই মাঠে নামা? এমন প্রশ্নের উত্তরে মাশরাফি মজা করেই বললেন, ‘মালিকরা জানে আমি ব্যাটসম্যান।’
ক্রিকেট ইতিহাসে এমন অধিনায়কের দেখা খুব কমই মিলেছে যে কি না শুধু অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করতে মাঠে নামেন। সেই হিসেব কষলে পাকিস্তানের ইমরান খানের পরে মাশরাফি বিন মুর্তজাই একমাত্র অধিনায়ক যাকে ব্যাটিং-বোলিং করতে হয় না।