বাস, পিকআপ ও মাইক্রোবাস চালকরা ট্রাফিক পুলিশকে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখাতে ভয় পান। তাদের কথায়, লাইসেন্স না দেখালে অল্প টাকায় মুক্তি আর লাইসেন্স দেখালেই নানা সমস্যা তৈরি করে ট্রাফিক পুলিশ।
বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টা। সরেজমিনে দেখা গেলো, রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট মোড়ে সোহাগ পরিবহনের কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মাইক্রোবাস চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখতে চাইলেন ট্রাফিক পুলিশ ইদ্রিস। তবে লাইসেন্স নেই বলে জানালেন চালক আনসার আলী। সেই মুহূর্তে পাশে দাঁড়িয়ে দু’জনের কথা শুনছিলেন এই প্রতিবেদক।
আধো আলো-অন্ধকারে অর্ধেক গ্লাস নামানো জানালা দিয়ে গাড়ির ভেতরে হাত ঢুকিয়ে দিলেন ট্রাফিক পুলিশ ইদ্রিস। একটু পরেই পকেটে হাত ঢুকিয়ে রাস্তা পেরিয়ে পুলিশ বক্সে গিয়ে বসলেন তিনি।
এ সময় মাইক্রোবাস চালক আনসার আলী কাছে জানতে চাইলাম, আপনার লাইসেন্স নেই, তাহলে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন কেন?
জবাবে তিনি বলেন, আমার লাইসেন্স আছে তো। কিন্তু ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখাতে ভয় পাই। কারণ লাইসেন্স নাই বললে ট্রাফিক পুলিশরা কিছু টাকা পেলেই ছেড়ে দেন। আর লাইসেন্স দেখালেই ঝামেলা। তখন শুরু হয়, গাড়ির এই সমস্যা, ওই সমস্যা। আরও কত কী!
কত টাকা দিলেন? জিজ্ঞেস করতেই গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বললেন, যাই।
রাস্তা প্রায় ফাঁকা রাত ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে রেলগেট মোড়ে ট্রাফিক বক্সে এই প্রতিবেদক ঢুকতেই ট্রাফিক পুলিশ ইদ্রিস বলে ওঠেন, কী চাই।
এ সময় তিনি বক্সের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আরেক ট্রাফিক পুলিশ আবদুল্লাহকে বলে ওঠেন, একটা গাড়ি থামান। বাসায় যাব। টাইম প্রায় শেষ।
কোনো মামলা ছাড়াই মাইক্রোবাসটিকে ছেড়ে দিলেন কেন, জানতে চাইলে ট্রাফিক পুলিশ ইদ্রিস জবাব না দিয়েই তুরাগ পরিবহনের একটি বাসে উঠে চলে যান।
ট্রাফিক পুলিশকে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখানো প্রসঙ্গে বাহন পরিবহণের একটি বাসের চালক মন্টু মিয়া বলেন, ঢাকার অধিকাংশ গাড়ির ফিটনেস নিয়ে ট্রাফিক পুলিশের সমস্যা নাই। কিন্তু মাঝে মাঝে তারা চালকদের লাইসেন্স দেখতে চান। আর ওই সময় চালক যদি লাইসেন্স দেখায়, তখন গাড়ির কাগজ কই, গাড়ির হেডলাইট ভাঙা কেন নানান প্রশ্ন করেন।
তিনি আরও বলেন, গাড়ির বিভিন্ন সমস্যা দেখিয়ে মামলা করেন পুলিশ। আর তখন মামলা না দেওয়ার জন্য টাকা সাধলেও নিতে চায় না। আর কেউ কেউ যদি টাকা নেন, তখন হাজার টাকা দিতে হয়। এ কারণেই কেউ লাইসেন্স দেখায় না খুব প্রয়োজন ছাড়া।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক দক্ষিণের যুগ্ম কমিশনার বনজ কুমার মজুমদার বলেন, চালকদের লাইসেন্স নাই তাই দেখাতে পারে না। অথবা সে নকল লাইসেন্স নিয়ে গাড়ি চালায়। তাই দেখাতে চায় না।
তিনি বলেন, ট্রাফিক পুলিশ যারে ধরে ঠিক মতো ধরা উচিত। ফিটনেস, ইন্স্যুরেন্স রিনিউ আছে কিনা সব দেখা পুলিশের কাজ। আর না থাকলেই আলাদা আলাদা মামলা হবে। এছাড়া সিগন্যাল না মানলে বা উল্টো পথে গেলে মামলা তো হবেই।
ট্রাফিক পুলিশের কাজই হলো এগুলো। আর চালকরা এক সঙ্গে এতোগুলো মামলা খেলে এমন কথা বলবেই। আর হ্যা, কিছু অসৎ লোক সব পেশায়ই থাকে, যোগ করেন বনজ কুমার।