শুধু বয়স্ক ব্যাক্তিই নয়, বহু তরুণ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারে। ডায়াবেটিস সম্পূর্ণ নিরাময় হয় না। তাই এ রোগে আক্রান্ত হলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। তবে একটু সচেতন হয়ে কিছু নিয়ম পালন করলে ডায়াবেটিসকে দূরে রাখা যায়। আজ থাকছে ডায়াবেটিসকে দূরে রাখার সচেতনমূলক কিছু উপায়।
# ডায়াবেটিসকে জানুন
শরীরের ইনসুলিনের ভারসাম্যহীনতায় রক্তে শর্করার মাত্রা অস্বাভাবিক হয়ে ডায়াবেটিসের সৃষ্টি হয়। সময় থাকতেই ডায়াবেটিস সম্পর্কে জেনে রাখা ভালো। এতে আগে থেকেই রোগটি সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা যায়।
# খাবারের পরিমাণ কমান
মাত্রাতিরিক্ত খাবার খাওয়া ডায়াবেটিসের অন্যতম কারণ। এ কারণে খাবারের পরিমাণ কমানো উচিত আগেভাগেই। খাবার খাওয়া কমানোর জন্য ছোট ছোট প্লেটে অল্প করে খাবার নিতে পারেন। এছাড়া খাবার খাওয়ার আগে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিলেও তাতে খাবারের পরিমাণ কমতে পারে।
# শারীরিক পরিশ্রম
নিয়মিত শারীরিক অনুশীলন করা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। বিশেষ করে দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণ, বিভিন্ন রোগ দূরে রাখায় এর ভূমিকা রয়েছে। শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম ডায়াবেটিসের মতো রোগকে দূরে রাখে।
# ওজন কমান
শরীরের ওজন যদি বেশি বেড়ে যায় তাহলে তা ডায়াবেটিসকে ডেকে আনতে পারে। তাই দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
# লাল আটার খাবার
ধবধবে সাদা আটা-ময়দা বাদ দিয়ে লাল আটার তৈরি রুটি ও অন্যান্য খাবার খান। এটি আপনার ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাবে।
# সকালের নাশতাকে গুরুত্ব দিন
সকালের নাশতা শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি কখনোই বাদ দেওয়া ঠিক নয়। সকালের নাশতায় প্রোটিন যুক্ত করলে তা সারাদিনের ক্ষুধা কমিয়ে রাখে। এতে শরীর যেমন সুস্থ থাকে তেমন ডায়াবেটিসও দূরে থাকে।
# ফ্যাটযুক্ত খাবার বাদ দিন
ফাস্ট ফুড দোকানের জাংক খাবার ও অন্যান্য অস্বাস্থ্যকর খাবারে উচ্চমাত্রায় স্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে, যা আপনার রক্তে ক্ষতিকর কোলস্টেরল বাড়িয়ে দিতে পারে। এটি রক্তের শর্করার মাত্রাও বাড়িয়ে দেয়। তাই এসব খাবার বাদ দিতে হবে।
# মিষ্টি পানীয় বাদ দিন
পিপাসা পেলে মিষ্টি পানীয় বা কোমল পানীয় পান করার অভ্যাস বাদ দিন। মূলত যেকোনো মিষ্টি পানীয়ই ক্ষতিকর। তাই এসব পানীয় সম্পূর্ণ ত্যাগ করা ভালো।
# স্বাস্থ্যকর খাবার খান
আপনি যদি বিকালের ক্ষুধা নিবৃত্ত করার জন্য অস্বাস্থ্যকর পিজা বা ফাস্ট ফুড বাদ দিয়ে তাজা ফলমূল কিংবা সালাদ খেতে পারেন তাহলে তা ডায়াবেটিস থেকে আপনার শরীরকে রক্ষা করবে।
# সবজি খান
অনেকেই সবজি খেতে মোটেই আগ্রহী থাকেন না। যদিও সবজি আপনার বহু উপকার করতে পারে। তাই প্রতিদিন আপনার খাদ্যতালিকায় রাখুন পর্যাপ্ত সবজি।
# মানসিক চাপমুক্ত থাকুন
মাত্রাতিরিক্ত মানসিক চাপ আপনার রক্তের শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। এ কারণে মানসিক চাপ থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। প্রয়োজনে ইয়োগা, মেডিটেশন ও শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন করুন।
# ভালোভাবে ঘুমান
রাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমান। এতে আপনার দেহের ওপর চাপ কমবে এবং ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগ দূরে থাকবে। ঘুমের অভাবে দেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতার ক্ষতি হয়।
# আঁশযুক্ত খাবার খান
যেসব শাক-সবজি ও খাবারে প্রচুর আঁশ রয়েছে সেসব খাবার খান। এতে আপনার টাইপ-টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমবে। প্রতিদিন কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ গ্রাম করে আঁশযুক্ত খাবার রাখুন খাদ্যতালিকায়। এতে রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
# প্রচুর পানি পান করুন
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে। পানি দেহের বিভিন্ন অঙ্গের কার্যক্রম চালানো সহজ করে দেবে। পর্যাপ্ত পানির অভাবে দেহের নানা সমস্যা হতে পারে।
# দারুচিনি সমৃদ্ধ খাবার খান
জার্মান গবেষণায় দেখা গেছে, দারুচিনিসমৃদ্ধ খাবার ডায়াবেটিস দূরে রাখতে সহায়তা করে। তাই খাবারে দারুচিনিসহ বিভিন্ন মসলা ব্যবহার করুন।
# সয়াযুক্ত খাবার খান
সয়া ডায়াবেটিস প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করে। তাই সয়াযুক্ত খাবার খেয়ে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করুন। এটি রক্তের শর্করার মাত্রা কমাতে ভূমিকা রাখে।
# গ্রিন টি পান করুন
নিয়মিত গ্রিন টি পান করুন। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসহ বিভিন্ন উপাদান রয়েছে, যা রক্তের শর্করা কমাতে ভূমিকা রাখে।
# ধূমপান বর্জন করুন
ধূমপানে ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এর কারণ হলো দেহের হরমোনজনিত পরিবর্তন। এ কারণে ডায়াবেটিস থেকে দূরে থাকতে ধূমপান বর্জন করা উচিত।
# স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো নীরবেই থাকে। এ কারণে ডায়াবেটিসে আক্রান্তরা তা বুঝতে পারেন না। ফলে পরিস্থিতি জটিল হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ কারণে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।