এশীয় উন্নয়ন ব্যংক-এডিবির অর্থায়নে চলমান মাধ্যমিক শিক্ষা বিনিয়োগ প্রকল্পে প্রায় দুই বছরেও সন্তোষজনক কোনো অগ্রগতি নেই। মন্থর গতিতেই চলছে প্রকল্পের বাস্তবায়ন। সেই সাথে দাতাদের শর্ত মেনে কর্মসূচি আকারে চালাতে হচ্ছে শিক্ষা খাতের এ বিনিয়োগ প্রকল্প। মাত্র ১২.০৬ শতাংশ আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে গত এক বছর দশ মাসে। বাস্তবায়নে আশানুরূপ অগ্রগতি না থাকলে ও প্রায় দুই বছরের মাথায় এসে প্রকল্পের ব্যয় দুই হাজার ৩৬১ কোটি ৩৫ লাখ ১৩ হাজার টাকা বা ১৪১.৫১ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সংশোধনী প্রস্তাবনার ওপর সম্প্রতি অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এ প্রশ্ন তোলা হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
পিইসি সূত্র মতে, চার বছর মেয়াদে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২০১৩ সালে এক হাজার ৬৫৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) অনুমোদন দেয়া হয়। এখানে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ সহায়তা রয়েছে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্প সমাপ্ত করার সময়সীমাও বেঁধে দেয়া হয়। এখন এক বছর ১০ মাস না যেতেই প্রকল্পের ব্যয় ১৪১.৫১ শতাংশ বা দুই হাজার ৩৬১ কোটি ৩৫ লাখ ১৩ হাজার টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। এ পর্যন্ত মূল কর্মসূচির বরাদ্দে মাত্র ১২.০৬ শতাংশ আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে। এক হাজার ৬৫৮ কোটি ১৪ লাখ টাকার বিপরীতে ব্যয় করা সম্ভব হয়েছে মাত্র ২০৯ কোটি টাকা। অথচ মন্ত্রণালয় থেকে ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে অর্থ ব্যয়ের সীমাবদ্ধতার কথা বিবেচনায় নিয়ে ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা উচিত বলে পিইসি সভায় জানানো হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় বিগত দুই বছরে কারিকুলামের ব্যাপারে এক লাখ পাঁচ হাজার ৩২৩ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাত লাখের অধিক। কর্মসূচির আওতায় ৫৪টি উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩০ শতাংশ ছাত্রী এবং ১০ শতাংশ ছাত্রকে উপবৃত্তি দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের অগ্রগতি কম হওয়ার ব্যাপারে তারা জিওবি খাতের অর্থ অবমুক্তিতে সময় ক্ষেপণকে দায়ী করেছেন। তারা বলছেন, অর্থ ছাড়করণে দুই থেকে চার মাস সময় লেগে যায়।
প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ না হওয়ার ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর জানায়, এটা কর্মসূচির ধারণায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সে জন্য ঋণদাতা সংস্থা এডিবির শর্তানুযায়ী প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের সুযোগ নেই।
জানা যায়, মূল কর্মসূচিতে যে ব্যয় ধরা হয়েছিল সংশোধিত প্রস্তাবনায় তা অনেক বেশি দেখানো হয়েছে। মূল কর্মসূচিতে সভা, সেমিনার, কর্মশালা খাতে ব্যয় ছিল ১১ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এখন সে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এ ব্যয় ৩০ লাখ টাকায় রাখার জন্য বলা হয়েছে। রাজস্ব খাতে স্ট্যাডিজ এবং সাব কন্ট্রাক্ট বাবদ ব্যয় ছিল ২৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। সেখানে বর্ধিত ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৭৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। কিন্তু রিডিং হেভিট অংশের ব্যয় বাদ দেয়া হয়েছে। ট্রান্স-২ খাতে বিদেশ ভ্রমণ খাতে ব্যয় কমানোর জন্য বলা হয়েছে পিইসি সভা থেকে। বলা হয়েছে অস্বাভাবিক ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবনার কারণেই প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। মূলধন খাতে ব্যয় ছিল ২৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। দুই বছরে এ খাতে কোনো অর্থই ব্যয় হয়নি। অথচ এ খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করে ১৪১ কোটি ৪৪ লাখ ১৮ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। তাই ব্যয়ের সামর্থ্য বিবেচনায় এসে এ ব্যয় পুনর্নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে। বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি খাতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও কোনো অর্থই ব্যয় করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু আবার একই খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ২৯৩ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মো: হুমায়ূন খালিদ ওই সভায় বলেন, সাধারণত: প্রকল্প বা কর্মসূচির বাস্তবায়ন অগ্রগতির পর্যায়কালকে বিভিন্ন ধাপে বিভক্ত করা হয়ে থাকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে এই কর্মসূচির মেয়াদকে ট্রান্স-১ এবং ট্রান্স-২ ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হচ্ছে। কোনো কর্মসূচির বাস্তবায়ন অগ্রগতির প্রথম ধাপ সমাপ্ত হওয়ার পর কিছু সুনির্দিষ্ট কারণে কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের জন্য দ্বিতীয় ধাপে চাহিদা ও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী অনিষ্পন্ন কাজ সম্পন্ন করার জন্য দ্বিতীয় দফায় প্রস্তাব করা হয়। সে ক্ষেত্রে ব্যয় বৃদ্ধির হার কম হয়ে থাকে। কিন্তু প্রস্তাবিত কর্মসূচির ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে মোট ১৪১.৫১ শতাংশ ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। যেখানে জিওবিতে ৯৮.২৩ শতাংশ এবং প্রকল্প সাহায্য খাতে ১৯৭.৯২ শতাংশ। তিনি বলেন, অর্থ ছাড়ে বিলম্ব হলে এটিকে প্রকল্পাকারে বাস্তবায়ন করা উচিত ছিল। এ ছাড়া আলাদাভাবে পূর্ণকালীন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেয়া হলে অগ্রগতি সন্তোষজনক হতো। তার মতে, সাধারণত সংস্থার প্রধানগণ দাফতরিক কর্মকাণ্ডে এতই ব্যস্ত থাকেন যে তাদের পক্ষে কর্মসূচি বা প্রকল্পে সার্বক্ষণিক সময় দেয়া সম্ভব হয় না।